শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অর্থহীন কথার ফাঁদ

জাফর আহমাদ:
কোরআন মাজিদে যাকে ‘লাহওয়াল হাদিস’ বলা হয়েছে, বাংলায় তাকে বাজে ও অর্থহীন কথা বলা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যে মনোমুগ্ধকর কথা কিনে আনে লোকদের জ্ঞান ছাড়াই-আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য এবং এ পথের আহ্বানকে হাসিঠাট্টা করে উড়িয়ে দেয়। এ ধরনের লোকদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আজাব।’ সুরা লোকমান : ৬

বর্ণিত আয়াতে ‘লাহওয়াল হাদিস’-এর বাংলা অর্থ ‘বাজে ও অর্থহীন কথা।’ শরিয়তের পরিভাষায় ‘লাহওয়াল হাদিস’ হচ্ছে এমন কথা, যা মানুষকে আত্ম-সমাহিত করে অন্য প্রত্যেকটি জিনিস থেকে উদাস করে দেয়। শাব্দিক অর্থের দিক দিয়ে এ শব্দগুলোর মধ্যে নিন্দার কোনোবিষয় নেই। কিন্তু খারাপ, বাজে ও অর্থহীন কথা অর্থে শব্দটির ব্যবহার হয়। যেমন গালগল্প, কল্পকাহিনি, পুরাকাহিনি, হাসিঠাট্টা, কথাকাহিনি, গল্প, উপন্যাস, গানবাজনা এবং এ জাতীয় আরও অন্যান্য জিনিস।

আর ‘লাহওয়াল হাদিস’ কিনে নেওয়ার এ অর্থ হতে পারে যে, ওই ব্যক্তি সত্য কথা বাদ দিয়ে মিথ্যা কথা গ্রহণ করে এবং সঠিক পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এমন কথার প্রতি আগ্রহান্বিত হয় যার মাধ্যমে তার জন্য দুনিয়াতেও কোনো মঙ্গল নেই এবং আখেরাতেও নেই। কিন্তু এটি এই বাক্যের রূপক অর্থ। এর প্রকৃত অর্থ এই যে, মানুষ তার নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে কোনো বাজে জিনিস কিনে আনে। আপাতদৃষ্টিতে মানুষ পুলকিত হয় বটে, কিন্তু পরিণামে তাতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে তার বিরোধীরা এ ধরনের মনোমুগ্ধকর কথার মাধ্যমে তার পথ থেকে মানুষকে বিরত এবং সত্য কথা থেকে বিরত রাখত। তবে ধ্রুব সত্য কথা হলো, এ ধরনের মনোমুগ্ধকর কথার স্থায়িত্ব কম।

বর্তমান সমাজে ‘লাহওয়াল হাদিসের চর্চা’ বিদ্যমান। নিম্নে এ ধরনের কিছু লাহওয়াল হাদিস বা বাজে কথার চর্চার উদাহরণ পেশ করা হলো।

অবাস্তব কিচ্ছাকাহিনি : বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বক্তারা মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বানানো বিভিন্ন কিসসা, গালগল্প, পুরাকাহিনি, হাসিঠাট্টা, কথাকাহিনি ও গল্পের অবতারণা করেন। কিন্তু এটা তো ইসলামের নীতি নয়। নবী মুহাম্মদ (সা.) দাওয়াতে এ ধরনের নীতি গ্রহণ করেননি। এ ধরনের নীতির ফলে সাধারণ জনগণ ইসলামের প্রকৃতরূপ, মৌলিক কথা ও ইসলামের মূল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হয়। যারা কল্পনাপ্রসূত কল্পকাহিনি বলে মানুষকে সাময়িক পুলকিত করেন বা অত্যন্ত বাকপটুতার মাধ্যমে মানুষকে উজ্জীবিত করে তোলেন তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিথ্যা বলেন। এ জন্য হাদিসে এ ধরনের কল্পকাহিনি, মিথ্যা বাকপটুতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘অতিরিক্ত চাটুকারীরা বা বাগাড়ম্বরকারীরা ধ্বংস হয়ে গেল।’ এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। সহিহ মুসলিম : ৬৬৭৭

বাগাড়ম্বর অর্থ কথার ঘটা, বড় বড় কথা বা কথার আড়ম্বর ও সমারোহ। কথার ফুলঝুরি বা কথার মধ্যে রঙ লাগিয়ে কথা বলে। এক কথায় যাকে মানুষ বাচাল বলে আখ্যায়িত করে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ এমন বাকপটু মানুষকে ঘৃণা করেন, যে জিহ্বা দ্বারা ভক্ষণ করে (এমন ঢঙে জিভ ঘুরিয়ে কথা বলে) যেমন গাভী নিজ জিহ্বা দ্বারা সাপটে ঘাস ভক্ষণ করে।’ সুনানে আবু দাউদ

হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং অবস্থানে আমার কাছের ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের মধ্যে আমার কাছে ঘৃণ্যতম এবং অবস্থানে আমার থেকে দূরতম হবে তারা, যারা অনর্থক অত্যধিক আবোলতাবোল বলে ও বাজে বকে এমন বাচাল ও বখাটে লোক; যারা আলস্যভরে বা কায়েদা করে টেনে টেনে কথা বলে। আর অনুরূপ অহঙ্কারীরাও।’ জামে তিরমিজি

কাল্পনিক উপন্যাস : বাস্তবতা বিবর্জিত মিথ্যা উপন্যাসের পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করার আমাদের অনেকের অভ্যাস রয়েছে এবং ঊর্ধ্বশ্বাসে একাধারে উপান্যাসটি শেষ করার জন্য খাওয়া-নাওয়া, নামাজ বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ইসলামি সাহিত্য, সাহাবাদের সত্য জীবনী, কোরআন-হাদিস পড়ার সময় এমনটি হতে দেখা যায় না।

পরনিন্দা ও পরচর্চা : আজকাল ওয়াজ মাহফিলে বক্তা অন্য একজন বক্তার, এক আলেম অন্য এক আলেমের সম্পর্কে গিবত ও খারাপ চর্চা করেন। ফলে মুসলিম সমাজে বিভক্তির বিষবৃক্ষ রোপণ হয় এবং ইসলামের সুমহান ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট হয়।

গানবাজনা : বর্তমানে টেলিভিশনে দেশি-বিদেশি সিরিয়াল নাটক, সিনেমা ও গানবাজনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করা হয়, যা সম্পূর্ণ লাহওয়াল হাদিস বা বাজে কথা শোনার অন্তর্ভুক্ত।

বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডা : বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে নিরর্থক ও অপ্রয়োজনীয় আড্ডায় প্রচুর সময় ব্যয় করা হয়। সে আড্ডায় কোনো গঠনমূলক বা উপকারী আলাপ-আলোচনার পরিবর্তে বেহুদা কথাবার্তা ও হাসি-ঠাট্টাই বেশি চলে। এগুলো লাহওয়াল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION